মোদির ‘মুসলিম’ বনাম ইন্দিরার ‘মঙ্গলসূত্র’: সারা ভারত কাঁপছে যে বিতর্কে

PM's Mangalsutra Remark: প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি একটি জনসভায় গিয়ে বলেন, কংগ্রেসের উদ্দেশ্য মহিলাদের সোনাদানা, মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নিয়ে বিশেষ গোষ্ঠীর মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া।

ভোটের মুখে সংখ্যালঘুদের নিয়ে কুকথা বলেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে গিয়ে দেশের মুসলিমদের তিনি অপমান করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা। ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে লোকসভা ভোট। দেশ জুড়ে নির্বাচনী আচরণবিধিও লাগু হয়ে গিয়েছে। এই সময় দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে এ ধরনের কথাবার্তা বলাটা কতটা সমীচিন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠে গিয়েছে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও।

ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে কংগ্রেস। কমিশনে আরও দুটি চিঠি জমা পড়েছে নাগরিকদের তরফেও। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি একটি জনসভায় গিয়ে বলেন, কংগ্রেসের উদ্দেশ্য মহিলাদের সোনাদানা, মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নিয়ে বিশেষ গোষ্ঠীর মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া। মোদি এ-ও বলেছেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে নাকি 'ঘুসপেটিয়া'-দের মধ্যে সম্পত্তি বিলিয়ে দেবে। প্রধানমন্ত্রীর সেই বক্তব্য নিয়ে জোর চর্চা নানা মহলে। শুধু মোদিই নন, ভোটের আগে বারংবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মুখেও শোনা গিয়েছে সংখ্যালঘু তত্ত্ব। অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে মোদি সরকারের তৎপরতার কথা বারবার তুলে ধরেছেন তিনিও।

আরও পড়ুন: মুসলিমদের অকথ্য অপমান মোদির! প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন কেন ব্যবস্থা নেবে না?

মোদির মঙ্গলসূত্র বক্তব্যের পাল্টা দিয়েছেন কংগ্রেসনেত্রী তথা সনিয়াপুত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধি। মোদির এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে প্রিয়াঙ্কা বলেন, 'গত দু'দিন ধরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নাগাড়ে বলে চলেছেন, কংগ্রেস পার্টি আপনাদের মঙ্গলসূত্র, সোনাদানা ছিনিয়ে নিতে চাইছে। ৭০ বছরের বেশি হয়ে গিয়েছে, দেশ আজ স্বাধীন। কংগ্রেস ৫৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। কখনও আপনাদের ঘরের সোনা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে? আপনার মঙ্গলসূত্র? আমাদের দেশ যখন যুদ্ধ করেছিল, ইন্দিরা গান্ধী নিজের গয়না দেশের জন্য দান করে দিয়েছিলেন। আমার মায়ের মঙ্গলসূত্র এই দেশের জন্য বলিদান হয়েছিল। এগুলো বিজেপির পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।'

মোদির এই বক্তব্য যেন ভোটের আগে আগুনে ঘি ঢেলেছে। ভোটের আগেই বিজেপি জমানার ইলেক্টোরাল বন্ড দুর্নীতির ব্যাপারটি সামনে এসেছে। সেই দুর্নীতি থেকে মানুষের নজর ঘোরাতে তড়িঘড়ি সিএএ কার্যকর করে দিয়েছিল দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সিএএ নিয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ চলেছে। এই সিএএ আইনের সরাসরি বিরোধিতা করেছে অসম, বাংলার মতো বেশ কয়েকটি রাজ্য। তার পর থেকেই বারবার বিভিন্ন জনসভায় সংখ্যালঘুদের আক্রমণ করেছেন মোদি-শাহরা।

সম্প্রতি বেঙ্গালুরুতে একটি জনসভায় গিয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বিজেপির এই দিকটার তীব্র নিন্দা করেন। তাঁর কথায়, , "ভারতীয় জনতা পার্টির নেতারা নারীদের বলিদানের কথা বুঝতে পারবেন না। দেশের জন্য বলিদান দেওয়া আমাদের মহিলাদের রক্তে রয়েছে। এটাই দেশের সংস্কৃতি। এখানে মা-বোনেরা দেশের জন্য প্রাণপাত করেছেন। যতক্ষণ না ঘরের প্রতিটি সদস্য বাড়ি ফেরে, ততক্ষণ জেগে বসে থাকেন মহিলারা। পরিবারে কোনও আর্থিক সংকট এলে নিজের গলার গয়না খুলে বন্ধক রাখতেই পিছপা হন না মহিলারা। নিজে না খেয়ে শুয়ে পড়বে কিন্তু, পরিবারের কোনও সদস্যকে খালি পেটে রাখেন না আমাদের মা-বোনেরা।" নোটবন্দি, করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন এবং কৃষক আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে মহিলাদের অবদানের কথাও বক্তৃতায় তুলে ধরেছিলেন প্রিয়াঙ্কা। তিনি বলেন, "মোদিজি যদি মঙ্গলসূত্রের মাহাত্ম বুঝতেন, তাহলে এমন অনৈতিক কথা বলতে পারতেন না। যখন নোটবন্দি হয়েছিল, দেশে কৃষক আন্দোলন হয়েছিল, কত মহিলার মঙ্গলসূত্র কেড়ে তাঁদের বিধবা করা হয়েছিল, মনে আছে? মণিপুরে যখন একজন মহিলাকে বিবস্ত্র করে ঘোরানো হল, তখন কেন চুপ ছিলেন মোদীজি? ভোটের জন্য আজ এত বড় বড় কথা বলছেন।"

আরও পড়ুন: ভোট এলেই অনুপ্রবেশ-জিগির শাহদের! কেন এই ইস্যু জিইয়ে রাখতে চায় বিজেপি?

এদিকে মোদির বক্তৃতা নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে নির্বাচন কমিশন। রাজস্থানের বাঁশওয়ারার ওই সভায় কংগ্রেসের ইস্তেহার ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের একটি পুরনো বক্তৃতা উল্লেখ করেন। কংগ্রেসের সংখ্যালঘু তোষণের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল সেই বক্তব্য। মোদির সেই বক্তব্য অসাম্প্রদায়িক ও দেশের নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন বলে দাবি করে কমিশনের দ্বারস্থ হয় কংগ্রেস। একই দাবি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি লিখেছিল সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও। সোমবার এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও, পরে তারা জানিয়েছে বিষয়টি বিবেচনা করছে তারা।

আদৌ বিজেপির এই বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের প্রভাব পড়বে ভোটবাক্সে? নাকি হিন্দুত্ববাদের আফিমে মজে থাকা দেশবাসী সরকারের সেই অসাম্প্রদায়িক, অসাংবিধানিক বক্তব্য শুনেই হাততালি দিয়ে চলবে, যেমনটা সেদিন দিয়েছিল রাজস্থানের জনসভায়। সত্যিই কি সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর ফল ভুগবে বিজেপি? উত্তর মিলবে ৪ জুন।

More Articles