ফোনের কণ্ঠস্বর 'কাকু'রই! ইডি-র তদন্ত রিপোর্টে তবু কেন খুশি নয় হাইকোর্ট?

Kalighater Kaku: বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি অমৃতা সিংহের এজলাশে ওই রিপোর্ট পেশ করা হয়। তবে সেই রিপোর্ট খুশি করতে পারেনি বিচারপতি অমৃতা সিংহকে। উল্টে ইডির রিপোর্ট অসম্পূর্ণ বলে ক্ষোভপ্রকাশ করেন তিনি।

নানা টালবাহানার পরে শেষপর্যন্ত ইডির হাতে গত সপ্তাহে এসে পৌঁছেছিল কালীঘাটের কাকুর কণ্ঠস্বরের ফরেন্সিক রিপোর্ট। তবে সেই মুখবন্ধ খামে কী রয়েছে, তা খোলসা করেনি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট। সেই রিপোর্ট সরাসরি আদালতে জমা দেওয়ার কথা জানিয়েছিল ইডি। হলও তেমনটাই। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি অমৃতা সিংহের এজলাশে ওই রিপোর্ট পেশ করা হয়। সামনে আসে সুজয়কৃষ্ণের গলার নমুনার ফরেন্সিক রিপোর্ট।

তবে সেই রিপোর্ট খুশি করতে পারেনি বিচারপতি অমৃতা সিংহকে। উল্টে ইডি-র রিপোর্ট অসম্পূর্ণ বলেই ক্ষোভপ্রকাশ করে বসেন তিনি। কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের নাম জড়িয়েছিল প্রাথমিকে নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায়। সেই মামলায় সুজয়কৃষ্ণকে যেদিন গ্রেফতার হন, সেদিন ইডি-র অন্য একটি দল গিয়েছিল বিষ্ণুপুর থানায় কর্মরত সিভিক ভলেন্টিয়ার রাহুল বেরার বাড়িতে। সেখান থেকে রাহুলের ফোনটি বাজেয়াপ্ত করে ইডি। সুজয়কৃষ্ণের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথাও জানতে পারে পুলিশ। তদন্তে নেমে সুজয়কৃষ্ণের সঙ্গে রাহুল বেরার কথোপকথনের একটি অডিও ফাইল ইডি-র হাতে আসে। যেখানে সুজয়কৃষ্ণের কণ্ঠটিকে শনাক্ত করতে পেরেছিল ইডি-র। ওই কথোপকথনে নাকি নিয়োগ-দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রমাণ লোপাটের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছিল রাহুলকে। আর সেই নির্দেশদাতা সত্যিই কালীঘাটের কাকু কিনা তা জানতে সুজয়কৃষ্ণের গলার নমুনার প্রয়োজন ছিল ইডি-র।

আরও পড়ুন: ইডি-র হাতে ‘কালীঘাটের কাকু’র কণ্ঠ-রিপোর্ট, কীভাবে মেলানো হল ভয়েস ক্লিপ?

তবে সেই নমুনা সংগ্রহ ছিল এভারেস্ট চড়ার চেয়েও কঠিন। গোড়া থেকেই সুজয়কৃষ্ণকে নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করার অভিযোগ ওঠে এসএসকেএম হাসপাতালের বিরুদ্ধে। গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই নানা বাহানা করে হাসপাতালে কাটিয়েছেন সুজয়কৃষ্ণ। মধ্যিখানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচারও হয়। বহু চেষ্টা করেও হেফাজতে নেওয়া তো দূরের, সুজয়কৃষ্ণের গলার নমুনাটাও সংগ্রহ করতে পারেনি ইডি। অবশেষে সেই অসম্ভব সম্ভব হয় গত জানুয়ারি মাসে। বহু টালবাহানার পর শেষপর্যন্ত সুজয়কৃষ্ণের কণ্ঠস্বরের নমুনা পায় ফরেন্সিক টিম।

এদিকে নমুনা পাওয়ার পরেও সেই রিপোর্ট প্রকাশ করতে বেশ খানিকটা সময় নিচ্ছিল ফরেন্সিক দল। যার জন্য আদালতে ভর্ৎসিতও হয় ইডি। এর পরেই ফরেন্সিকে চিঠি লিখে নমুনার রিপোর্ট চান ইডি-র গোয়েন্দারা। গত সপ্তাহে মুখবন্ধ খামে আসে সেই রিপোর্ট। বিচারপতি অমৃতা সিংহই নির্দেশ দিয়েছিলেন, যাতে সুজয়কৃষ্ণের কণ্ঠস্বরের ফরেন্সিক পরীক্ষা হয়। তবে কেন সেই রিপোর্ট খুশি করতে পারল না বিচারপতিকে।

বুধবার আদালতে ইডি জানায়, সুজয়কৃষ্ণের কণ্ঠস্বর নিয়ে তারা যে সন্দেহ করেছিল, তা মিলে গিয়েছে। কার্যত সেই সন্দেহের সপক্ষেই গিয়েছে রিপোর্ট। পাঁচ পাতার ওই রিপোর্টের তিন পাতা জুড়েই ছিল 'কালীঘাটের কাকু'-র কণ্ঠস্বরের রিপোর্ট। শেষ দু'পাতা জুড়ে ছিল ইডির সার্বিক তদন্ত রিপোর্ট। যেখানে রয়েছে ইডি-র বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তির হিসেব। সেই রিপোর্টে মোট ১৩৪ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংখ্যা।

কিন্তু বিচারপতি অমৃতা সিংহ রুষ্ট হয়েছেন তদন্ত-রিপোর্টের আকার দেখেই। তাঁর প্রশ্ন, এত সংক্ষীপ্ত কেন ইডি-র এই রিপোর্ট? বিচারপতি সিংহের প্রশ্ন, ‘‘২০১৪ সাল থেকে যে দুর্নীতি হচ্ছে, তাতে বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির পরিমাণ এত কম কেন? টাকার অঙ্কই বা এত কম কেন?’’ তার উত্তরে ইডি জানায়, আরও কিছু সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। তার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে অনুমতিও চাওয়া হয়েছে। ঠিকঠাক গতিতেই তদন্ত এগোচ্ছে বলে জানান ইডি আধিকারিকরা। তবে তাতে সন্তুষ্ট নন বিচারপতি। পাশাপাশি সুজয়কৃষ্ণের কণ্ঠস্বরের ফরেন্সিক রিপোর্ট নিয়েও অসন্তুষ্ট আদালত। বিচারপতির প্রশ্ন, কোন কথোপকথনের সঙ্গে সুজয়বাবুর কণ্ঠস্বরের নমুনা মেলানো হল, তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই ওই রিপোর্টে।

আরও পড়ুন:তাঁর কণ্ঠস্বরের খোঁজে হন্যে ইডি! কীভাবে ‘কালীঘাটের কাকু’ হলেন বেহালার সুজয়কৃষ্ণ?

এদিকে সুজয়কৃষ্ণের মামলায় ইডি-র পাশাপাশি আদালতে রিপোর্ট জমা করেছে সিবিআইও। তারা জেলে গিয়ে পৃথক ভাবে সুজয়কৃষ্ণকে জেরা করতে চায়। আপাতত এসএসকেএমেই রয়েছেন তিনি। নিয়োগ মামলার তল্লাশিতে জড়িয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এই সংস্থাও। তবে এ ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি আদালত। বিচারপতি অমৃতা সিংহ জানিয়েছেন, আগামী ১২ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

দিন কয়েক আগেই এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বিরাট পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। বাতিল হয়ে গিয়েছে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের নিয়োগ। ভোটের মধ্যে সেই ঘটনা অস্বস্তি বাড়িয়েছে তৃণমূলের। তার মধ্যে আবার উস্কে উঠছে কালীঘাটের কাকুর দুর্নীতি মামলা। সেই মামলাতেও কি কেঁচো খুঁড়তে খুঁড়তে খুব শিগগিরই কেউটে পর্যন্ত পৌঁছে যাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সেই প্রশ্নই আপাতত উঁকি দিচ্ছে 'কালীঘাটের কাকু' মামলায়।

More Articles