বাবা কসাই, জন্ম যৌনপল্লী! কবি নামদেও ধসাল এক বেপরোয়া বিস্ফোরণ

Poetry of Namdeo Dhasal: মুম্বইয়ের কুখ্যাত যৌনপল্লী 'গোলপিঠা'-র বাসিন্দা এই কবি। তাঁর বাবা ছিলেন ওই তল্লাটের এক মাংসের দোকানের কসাই।

পূর্ণচন্দ্র দে উদ্ভটসাগরের কথা এখন সাধারণ মানুষ এবং এমনকী বিদ্বজনেরাও সম্পূর্ণ ভুলে গেছে। অথচ, ভিন্ন ধরনের ইতিহাস তৈরির কাছে তাঁর গ্রন্থগুলির বিশেষ কদর হতে পারত। তাঁর জীবৎকালটিও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। ১৮৫৭ সালে, সিপাহি বিদ্রোহ একদিকে আর অন্যদিকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা, ঔপনিবেশিক শাসনের এমন দ্বিমুখী বাস্তবতায় জন্ম তাঁর। মৃত্যু হলো ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির আগের বছর - ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে। তখনও বেশ সরগরম পরিস্থিতি। বাংলায় বলে 'উদ্ভট' শ্লোক। সংস্কৃত শ্লোক এবং স্তব ধরনের রচনা। যাকে অনেকসময় বলা হয়, 'সুভাষিত' বা 'সুবচন'। সেইসব রচনার সুবৃহৎ সংকলন (লক্ষাধিক শ্লোক) করে তিনি 'উদ্ভটসাগর' উপাধি লাভ করেন। তাঁর কাজগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পদ্ধতিও একেবারে তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। তিনি প্রাচীন কাহিনির সংগ্রহ এবং কলকাতার ইতিহাসের রচয়িতা। এর পাশাপাশি তিনি ভোলা ময়রা, রামদুলাল সরকার, অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি, রঘুনাথ শিরোমণি প্রমুখ অত্যুজ্জ্বল দেশিয় ব্যক্তিবর্গের জীবনী রচনা করেন। সংস্কৃত কলেজের অনুপুঙ্খ ইতিহাসও লিখেছিলেন। ইতিহাস রচনায় তিনি ক্ষমতাবান প্রভুদের বা প্রতিষ্ঠানের বা উপনিবেশের জোগান দেওয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করেননি, তিনি ক্রমাগত সে যুগের গাল-গল্প, জনশ্রুতি, লোককাহিনি এইসব সূত্র থেকেও উপাদান সংগ্রহ এবং প্রয়োগ করেছিলেন। ইতিহাস সম্পর্কে তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিটি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। ফলে তাঁর লেখালেখির মধ্যে সেযুগের একটি 'নিরপেক্ষ', 'জনপদ সংশ্লিষ্ট', 'বহুত্ববাদী', 'অনেকান্ত' বহুস্বরের নির্ভরযোগ্য চিত্র খুঁজে পাওয়া যাবে। তিনি কারও প্রভাবে বা মোসাহেবি প্রবণতায় তোতাপাখির মতো ইতিহাস আউড়ে যাননি। লোকবৃত্ত থেকে তাঁর সংকলন করেছিলেন। একে 'বিকল্প' পথ সন্ধানের প্রয়াস বলা যেতে পারে। এই ধরুন, দু-একটি ছোট্ট-ছোট্ট দৃষ্টান্ত দিচ্ছি।

১) '১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সমস্ত কলিকাতায় বিশেষত পটলডাঙায়, এক অদ্ভুতভাবে ভয়ের সঞ্চার হইয়াছিল। একটা গুজব উঠিল যে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ক্ষত-বিক্ষত সৈন্যগণের জন্য মলমের প্রয়োজন হওয়ায় কলিকাতায় মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তার সাহেবরা মোটাসোটা লোকদিগকে ধরিয়া লইয়া গিয়া তাহাদিগকে মারিয়া ফেলিতেছেন এবং তাহাদের চর্ব্বি লইয়া মলম প্রস্তুত করিয়া উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পাঠাইতেছেন। ... কলেজের পার্শ্ব দিয়া যাইতে সকলেই ভয় পাইল। বলিতে কি, মেডিক্যাল কলেজ ও তাহার চতুষ্পার্শ্ববর্তী স্থান সকল কিছুদিনের জন্য জনশূন্য হইয়া গেল'।

২) 'তৎকালে সুপ্রসিদ্ধ সুপণ্ডিত কে. এম. বাঁড়ুয্যে মহাশয়ের' বয়ানে উদ্ভটসাগর জানাচ্ছেন - 'সেই সময় ছেলেধরার এত ভয় ছিল যে তাহা বলা যায় না। তৎকালে কলিকাতায় কোনো ভদ্রলোক বালকদিগকে অপরাহ্ণ ৪ টার পরে বাটী হইতে বাইরে যাইতে দিতেন না। ... এই পুষ্করিণীর (হেদুয়া) পশ্চিমদিকে যে গির্জ্জাঘর আছে, তাহা আমারই যত্নে স্থাপিত হইয়াছিল। যখন এই গির্জ্জা-ঘর নির্মিত হইতেছিল, তখন একটী চণ্ডাল জাতীয় মিস্ত্রির ১২ বৎসর বয়সের পুত্র নিরুদ্দেশ হইয়াছিল। বহু অনুসন্ধান করিয়াও তাহাকে পাওয়া যায় নাই। বোধ হয়, সেই ছেলেটি কোনো ছেলেধরার হাতে পড়িয়া থাকিবে।'

আরও পড়ুন- আলিপুর চিড়িয়াখানায় দুপুর কাটাতেন জীবনানন্দ

এইসব উপাদান থেকে নানা ধরনের তাৎপর্য নির্ধারণ করা সম্ভব। বিভিন্ন অবস্থান এবং দৃষ্টিকোণ থেকে এইসব অমূল্য সূত্রগুলি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে ইতিহাসের সন্ধান নতুন দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ব্রিটিশ প্রভুদের তালে-তাল মেলানো ইতিহাসের বয়ানকে এ ধরনের আরও প্রচুর প্রসঙ্গ ক্ষত-বিক্ষত করে দিতে পারে। আমাদের মনে পড়ে যেতে পারে, পূর্ণচন্দ্র দে ইতিহাসের কাহিনি সূত্রর ফাঁকে জানিয়েছেন, '১০০ বছর পূর্বে বাগবাজারে দুই জন মহাদুষ্ট প্রসিদ্ধ গুণ্ডা ছিল। ইহাদের নাম হরি বাগদী ও ছিরে নাপিত।' নগর এবং তার নিজস্ব অপরাধ জগৎ ক্রমে ক্রমে তৈরি হয়। কলকাতার ক্ষেত্রেও সেও এক ঔপনিবেশিক বাস্তবতা। সাহেবপাড়া এবং নেটিভপাড়ায় বিভক্ত শহর কলকাতা, আঠারো শতকে উভয় অঞ্চলেই ডাকাতদলের উত্থান লক্ষ্য করেছিল। বাঙালি যেমন ছিল, ডাকাতদলে তেমনই ছিল অন্য রাজ্যের ধুরন্ধর অপরাধীরা। সবথেকে মজার কথা, বহু শ্বেতাঙ্গ এইসব দলের সর্দার ছিল। এদের বড় সংখ্যক ছিল ইওরোপ আমেরিকার নাবিক, ফোর্ট উইলিয়াম থেকে বিতাড়িত ইংরেজ সেনানী, এদের কেউ কেউ ভাগ্যের ফেরে ভবঘুরে হয়ে কপাল ফেরাতে কলকাতায় এসেছিল।

কবি নামদেও ধসাল

একজনের কথাই শুধু বলি। পুলিশ রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, ১৮৭০ সালে মার্কিন এক দুর্দান্ত লুঠেরার নাম ছিল জন অ্যান্ডারসন। ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিটের বিখ্যাত গয়নার বিপণি Cook & Kelvey-র মেঝে পর্যন্ত সুড়ঙ্গ সে নর্দমার সমান্তরালে দীর্ঘদিন ধরে তৈরি করে। তারপর রাত্তিরে ঢুকে গয়না নিয়ে চম্পট দেয়। তারও আগে ১৭৮৯ সালের ২১ অক্টোবর পর্তুগিজ এবং বাঙালি সদস্যাবিশিষ্ট ডাকাতদল কলুটোলার বিখ্যাত ধনী চৈতন্য দত্তর বাড়িতে হানা দেয়, তাকে হত্যা করে ছ'হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। আবার ১৭৯৫-এর ২৯ জানুয়ারি ২০০ জনের এক ডাকাতদলের আক্রমণ ঘটে ব্যবসাদার মতিলাল শীলের পিতা চৈতন্য শীলের বাড়ি। এই ডাকাতদলে ছিল জার্মান, পর্তুগিজ, ফরাসি, ইতালিয়ান এবং বাঙালি দুষ্কৃতী! প্রখ্যাত সমাজতাত্ত্বিক এবং গবেষক সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় দেখিয়েছেন, ১৮৫২ সালে ডাকাতি দমনের জন্য কলকাতায় একটি কমিশন বসে এবং পরবর্তীকালে ডাকাতির বদলে অপরাধ হিসেবে সিঁদেল চোরেরা বেশি সংখ্যায় কলকাতায় দেখা দিয়েছিল। কলকাতার এই আন্ডারগ্রাউন্ড বাস্তবতাকে তিনি নাম দিয়েছেন 'পাতাল জগৎ'। চুরিবিদ্যার যে বিরাট চক্র তখন কলকাতার পথে এবং জনপদে চালু ছিল, তার একটা বড় শাগরেদ ছিল কিশোর স্যাঙাৎরা। তারা সবাই ১৬/১৭ বছরের কিশোর। তারা চুরিবিদ্যায় দক্ষ ছিল তো বটেই, পাশাপাশি খুব নিয়মিত পথচারী এবং পুলিশ সম্পর্কে সর্দারদের কাছে সংবাদ সরবরাহ করত। উনিশ শতকের কলকাতার নথিপত্রে সাহিবজান নামের এক কুখ্যাত সিঁদেল চোরের কথা পাওয়া যাচ্ছে, যার সিঁদ কাটার কৌশল ছিল নিষিদ্ধ নকশাজাত। আমাদের নিশ্চয়ই মনে পড়বে, মৃচ্ছকটিকম্ নাটকে (আনুমানিক পঞ্চম খ্রিস্টাব্দ) সিঁদেল চোর বার্বিলকের কথা! উপনিবেশের কলকাতা শহরের পাতালজগতে যেন সেই ছায়া দেখা গেল।
বাংলা কবিতার বিস্মৃত ভূখণ্ডে অবশ্য সেইভাবে বিশ শতকে বা একুশ শতকে এই কলকাত্তাইয়া পাতালজগতের, অপরাধ প্রসঙ্গের, কুখ্যাত অঞ্চলের অনুষঙ্গ নজরে আসে না। বাংলা কবিতায়, সেই উনিশ শতক থেকেই মোটামুটি কবি মাত্রেই 'শিক্ষিত', 'মধ্যবিত্ত', 'ভদ্রবৃত্তজাত', 'গৃহস্থ' গোছের মানুষ। অভিজ্ঞতার স্পষ্ট প্রকাশও বারংবার বুঝিয়ে দেয় অপরাধ জগতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক একটু দূরবর্তী। শৈলেশ্বর ঘোষ, মলয় রায়চৌধুরী, প্রমুখ হাংরি জেনারেশনের কবিরা গ্রেপ্তার হয়ে পুলিশ হেফাজতে ছিলেন ঠিকই, কিন্তু ১৯৬৪ সালের ওই ঘটনার ক্ষেত্রে অভিযোগ ছিল, 'অশ্লীল' কবিতা রচনার। ক্ষমতা বা রাষ্ট্র তাঁদের অন্য ধরনের কোনও 'অপরাধ'-এর জন্য গ্রেপ্তার করেনি। পরবর্তীকালে নিহত কবি দ্রোণাচার্য ঘোষও ছিলেন নকশাল রাজনীতির যুবনেতা। প্রসঙ্গত একথা বলাই চলে, অপরাধী বা অপরাধ জগতের ভাষার উল্লেখযোগ্য চিহ্ন সেভাবে বাংলা কবিতায় নেই। এমনকী পুরন্দর ভাট এবং তাঁর স্রষ্টাও মধ্যবিত্ত পরিসর থেকে সম্পূর্ণ পাতালজগতে নামতে পারেননি।

এদিক থেকে মারাঠি কবিতায় এমন একটা নতুন মাত্রা যোগ করেছেন কবি নামদেও ধসাল (১৯৪৯-২০১৪)। তিনি যেন এক বিস্ফোরণ! এই দলিত কবির কবিতার বেপরোয়া এবং আক্রমণাত্মক ভাষাটাই একটা জেহাদ। তার ওপর নানা অপরাধ জগতের চিত্রকল্প, নেশা আর খুনখারাপির প্রসঙ্গ - সব মিলিয়ে অস্বস্তিকর একটা ধাক্কা। আমাদের 'সুখী গৃহকোণ শোভে গ্রামাফোন' জীবনযাত্রায়, বাবুয়ানি মাখা বিপ্লবী চিৎকারে, শৌখিন মজদুরি আর জোরজবরদস্তি নিম্নবর্গ সাজার চেষ্টায় এ এক কশাঘাত! কোন এক মহাপুরুষ আমাদের সতর্ক করেছিলেন - 'সাধু হইও। সাধু সাজিও না। সংসারী সাজিও। সংসারী হইও না।'
ধসালের ব্যক্তি জীবনও ব্যতিক্রমী। মুম্বইয়ের কুখ্যাত যৌনপল্লী 'গোলপিঠা'-র বাসিন্দা এই কবি। তাঁর বাবা ছিলেন ওই তল্লাটের এক মাংসের দোকানের কসাই। এই যৌনপল্লী এক আশ্চর্য নরক! এখানকার পাচার হওয়া মেয়েরা অধিকাংশই নাবালিকা। তার ওপর ঘিঞ্জি, অস্বাস্থ্যকর, দুর্গন্ধময় এলাকায় অল্পদামে এরা গণিকাবৃত্তি চালায়। নানা অঞ্চল, প্রদেশ থেকে এরা আসে, এমনকী নেপাল থেকেও কেউ কেউ ঢুকে পড়ে দেহ ব্যবসায়। দ্রুত এরা ধ্বংস হয় যৌনরোগ এবং টিবি বা এইডস-এ। এই গলিজটলার বুলি জবান আর খিস্তি-খেউড় থেকেই তৈরি হয় নামদেও ধসালের কবিতা! সেখানে নিম্নবর্গের নানা অধিকার ছিনিয়ে আনার হুঙ্কার, সমাজের উচ্চবর্গ পোষিত প্রতিষ্ঠানগুলিকে চুরমার করে বিস্ফোরণের হুমকি এবং আর্তনাদের স্বপ্ন মিলেমিশে এক রহস্যময়, অচেনা জগৎ! ২০০৪ সালে যখন ধসালের কবিতা বাংলায় তর্জমা করছিলাম, আমি বুঝতে পারছিলাম ব্যর্থতা আমার নিয়তি। অবশ্য, সে তো যে কোনও অনুবাদেরই সমস্যা! ধসালের ব্যবহৃত ভাষা এতই পাতাল থেকে আলাপ, সে হদিশ আমার মতো 'ভদ্রলোক'-এর আয়ত্তের বাইরে। তবু একটা চেষ্টা। তাঁর দীর্ঘ একটা সাক্ষাৎকারও অনুবাদ করেছিলাম, যেখানে নিজের জীবনের ভবঘুরে, নেশাগ্রস্ত, যৌনকর্মীসংসর্গের ইতিবৃত্ত নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন ধসাল। জানিয়েছেন, সেই 'অন্ধকার' এলাকা থেকেই তাঁর কবিতার উত্থান।

আরও পড়ুন- জীবনানন্দ তৃতীয় নয়নে দেখেন বিশ্বযুদ্ধোত্তর কলকাতা

আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, নামদেও ধসালের কবিতায় এত যে রক্তময় হিংস্রতা, হত্যা, খুনি, আসামী, কারাগার আর ব্যবস্থার প্রতি ঘেন্না - তার মূলে কি কসাইবাবার মাংস কাটা, ছাল ছাড়ানো আর শান দেওয়া ছুরি-ভোজালি-খঞ্জর, রক্ত, পশুমুণ্ড এসবের সম্পর্ক আছে? ধসালের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নামেই সেই ইশারা? কাব্যগ্রন্থের নাম 'গোলপিঠা'। প্রকাশকাল - ১৯৭২।

(চলবে)

পুনশ্চ: এই কিস্তির সামান্য লেখাটি উৎসর্গ করছি তৎকালীন কসাইতলা অর্থাৎ আজকের বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের একটি আস্তাবলে বন্দি কিশোরী ক্রীতদাসীকে। এই ক্রীতদাসীর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ক্যালকাটা ক্রনিকল্ পত্রিকায়। অসুস্থ এই বালিকাকে বাড়ির কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিয়ে বন্দি করে রাখা হয় আস্তাবলে। দিনে সামান্য কিছু খাবার তাকে দেওয়া হতো। তখন কলকাতার বড় মানুষদের পরিবারে রমরমিয়ে চলত 'গোলামি প্রথা'। গ্রামের দুর্ভিক্ষ, মহামারী, মড়ক বা দারিদ্র্য থেকে বাঁচতে মানুষ চলে আসছে দলে দলে কলকাতায়, তারপর সামান্য টাকার বিনিময়ে বেচে দিচ্ছে ছেলে, মেয়ে, ভাই, বোন বা বউকে। তার ফলে সামান্য অর্থের বিনিময়ে বড় মানুষরা পেয়ে যাচ্ছে আমরণের এক গোলাম। সমাচার দর্পণে প্রকাশিত হয়েছিল, গোলামের বাজারদর -

বালক = চার টাকা থেকে পনেরো টাকা
স্ত্রীলোক = ষোলো টাকা থেকে চব্বিশ টাকা
পুরুষ = চব্বিশ টাকা থেকে একশো ষাট টাকা

এই দাস ব্যবসা বেআইনি ঘোষিত হয় ১৮৪৩ সালে। মনে রাখতে হবে, নগরের নানা অপরাধের এও এক উচ্চবর্গীয় চেহারা!

More Articles