ভোটের দিন বড় শহরের ভোটাররা কী করেন? অবাক করবে নির্বাচন কমিশনের এই তথ্য

Election Commission India: গত লোকসভা নির্বাচনে দিল্লিতেও অত্যন্ত কম মানুষ ভোট দেন, মাত্র ৫৬.৮৭%।

গ্রামের মানুষ যতটা ভোট বিষয়টা নিয়ে মাথা ঘামান, শহরের মানুষ ঘামান না। ভোট দিতে যাওয়া নিয়ে স্পষ্ট ভেদাভেদ রয়েছে গ্রামীণ আর শহুরে মানুষদের মধ্যে। এ নিছক কথার কথা নয়, নির্বাচন কমিশনের তথ্যই বলছে, বিশেষত মহানগরের মানুষজন ভোট দিতে যাওয়া নিয়ে আগ্রহী নন। তা সে সংসদ নির্বাচন হোক বা বিধানসভা বা পৌরসভা, ভোট দিতে যান না তারা। নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, দেশের ৫০টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ১৭টি, যার মধ্যে বেশিরভাগই মহানগর এবং শহর, সেখানে ২০১৯ সালের নির্বাচনে সর্বনিম্ন ভোটারের উপস্থিতির রেকর্ড করা হয়েছে৷

গত লোকসভা নির্বাচনে, হায়দরাবাদে মাত্র ৪৪.৮৪% ভোটার ভোট দিয়েছিলেন। এই তালিকায় তালিকায় চতুর্থ স্থানে ছিল হায়দরাবাদ। তার আগে আছে অনন্তনাগ, শ্রীনগর এবং বারামুল্লা, যেখানে সর্বনিম্ন ভোটার ছিল যথাক্রমে ৮.৯৮%, ১৪.৪৩% এবং ৩৪.৬০%। পুনেতে ভোট দিয়েছিলেন মাত্র ৪৯.৮৯% ভোটার, মুম্বই দক্ষিণ কেন্দ্রে ৫১% এবং বেঙ্গালুরু দক্ষিণে ৫৩.৭০%। কানপুর, এলাহাবাদ, লখনউ এবং নাগপুরের মতো শহরগুলিতেও ৫৫%-এর বেশি ভোটার ভোট দেননি। গত লোকসভা নির্বাচনে দিল্লিতেও অত্যন্ত কম মানুষ ভোট দেন, মাত্র ৫৬.৮৭%।

আরও পড়ুন- দেশের মহিলারা বাদ! কেমন ছিল ১৯৫২ সালের প্রথম লোকসভা নির্বাচন?

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট পড়েছে ১৯ এপ্রিল। তাতেও চেন্নাইয়ের তিনটি কেন্দ্রে আগের তিনটি নির্বাচনের তুলনায় কম ভোটার ভোট দিয়েছেন। চেন্নাই সেন্ট্রাল আসনে ২০১৯ সালে ভোট দিয়েছিলেন ৫৮.৭৫% মানুষ, এবার দিয়েছেন ৫৩.৯১%।

ভোট নিয়ে এত অনীহা কেন শহুরে মানুষদের? বিশেষজ্ঞ এবং নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলছেন, ভোটারদের মধ্যে উত্সাহের অভাবের কারণই হলো 'শহুরে উদাসীনতা'। শহুরে ভোটারদের মধ্যে বিচ্ছিন্ন একটা মানসিকতা কাজ করে। ভোট দিতে যাওয়ার আলস্যের পাশাপাশি সচেতনতার অভাবও বড় কারণ।

ডেকান হেরাল্ডে একটি প্রতিবেদনে সিমলার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র বলছেন, শহুরে এই উদাসীনতা কিন্তু মানুষের আত্মবিশ্বাসের ফলাফল ঠিক নয়। এর নেপথ্যে আছে অরাজনৈতিক পরিবেশের বৃদ্ধি। পাশাপাশি মানুষ এখন বিশ্বাস করে নিতে শিখেছে যে, 'কিছুই পরিবর্তন হবে না'। শহুরে সমস্যা, সমস্যাগুলির প্রতি আগ্রহের অভাব, দারিদ্র্য, অপরাধ, পরিবেশের অবনতি, রাজনীতি কিছুতেই কিছু এসে যায় না যেন। এখানে মানুষ দিবারাত্র পরিশ্রম করে কেবল টাকা রোজগারের জন্য।

নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি বলেছে যে, তারা ২৬৬টি সংসদীয় নির্বাচনী এলাকা চিহ্নিত করেছে, যার মধ্যে ২১৫টি গ্রামীণ এলাকায় কম ভোটার রয়েছে এবং আসন্ন নির্বাচনে ভোটের শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করবে কমিশন। নির্বাচনী কমিশন ‘You are the One’ নামে সচেতনতা প্রচার করছে। যাতে কোনও ভোটার নিজেকে কম গুরুত্বপূর্ণ না মনে করেন। গণতন্ত্রের এই উৎসবে নিজেকে শামিল করেন।

বৃহত্তর হায়দরাবাদ মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন প্রায় ২,০০০টি ভোটকেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে ৫০% বা তার কম ভোট পড়েছে। এসব কেন্দ্রে ভোটার তালিকা থেকে অযোগ্য ভোটারদের সরিয়ে হাজার হাজার নতুন ভোটারের নাম নথিভুক্ত করার কাজও করেছে কমিশন। পৌরসভা ভোটারদের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি প্রচার, সম্পত্তি করদাতার তথ্য ব্যবহার করে এসএমএস পাঠানো, সই সংগ্রহ এবং মলে ফ্ল্যাশ মব-এর মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

নির্বাচন কমিশনের ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রাম সিস্টেম্যাটিক ভোটারস এডুকেশন অ্যান্ড ইলেক্টোরাল পার্টিসিপেশন (SVEEP) হচ্ছে ভোটার এবং নাগরিকদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কে শিক্ষিত করা এবং তাদের ভোটদানে অংশগ্রহণে আরও আগ্রহী করে তোলার লক্ষ্যে একটি পরিকল্পনা। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট বলছে, কোনও রাজ্যের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং জনসংখ্যার পাশাপাশি নির্বাচনী অংশগ্রহণের ইতিহাস মাথায় রেখেই এই SVEEP তৈরি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন- কেন চাইলেও মোছা যায় না আঙুলের ভোটের কালি? জানেন, নির্বাচনী কালির ইতিহাস?

বেঙ্গালুরুতে, ব্রুহাত বেঙ্গালুরু মহানগর পালিকে (BBMP) কর্মীদের মধ্যে ভোট সচেতনতা প্রচারের জন্য IT-BT কোম্পানিগুলির সঙ্গে সহযোগিতা করেছে এবং তাদের ভোটের দিন সবেতন ছুটি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে। বেঙ্গালুরুতে সারা দেশের মধ্যে অন্যতম কম সংখ্যক মানুষ ভোট দেন। তাই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে, সাইক্লোথন করে, পদযাত্রা করে, দু-চাকায় ঘুরে ঘুরে নানা র‌্যালির মতো বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভোটদানের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে ভোটারদের আগ্রহ পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে। এবার, ভোটার স্লিপে QR কোডও থাকবে যাতে ভোটকেন্দ্রের অবস্থান জানা যাবে।

পুনে জেলা নির্বাচন অফিস ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কম ভোটার ছিল এমন নির্বাচনী এলাকাগুলিকে লক্ষ্য করার জন্য নির্দেশ জারি করেছে। ভোট দেওয়ার জন্য পড়ুয়াদের রেজিস্ট্রেশন করা এবং ২০ থেকে ২৯ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের আগ্রহ বাড়াতে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে বস্তি এলাকায় মহিলা ভোটারদের ভোটদান বাড়ানোর দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার এপ্রিলের শুরুতেই কম ভোটার নিয়ে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে মিউনিসিপ্যাল কমিশনার (এমসি), জেলা নির্বাচন অফিসার (ডিইও) এবং রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকদের (সিইও) ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বুথভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। শহর এবং গ্রামীণ এলাকার জন্য পৃথক কৌশল প্রস্তুত করতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

More Articles